ওমর ফারুক চৌধুরীর পরিণতি কী


ডেস্ক রিপোর্ট • যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর শেষ পরিণতি কী? আগামী ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সংগঠনের জাতীয় কংগ্রেসে তিনি কি উপস্থিত থাকতে পারবেন? নাকি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির নেতৃত্বেই কংগ্রেসের আয়োজন করা হবে?

এমন সব প্রশ্নের ফয়সালা করতে আজ রোববার বিকেল ৫টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন যুবলীগ নেতারা। তবে এ বৈঠকে উপস্থিত থাকার সুযোগ মিলছে না অনেকটাই লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা ওমর ফারুক চৌধুরীর। এ অবস্থায় যুবলীগ চেয়ারম্যানের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী ঘটতে যাচ্ছে; সেটা নিয়েই চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ সমকালকে জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন। তবে সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী যে বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন না, তা নিশ্চিত। গণভবন থেকেই বৈঠকে থাকার বিষয়ে তাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কংগ্রেসে কে সভাপতিত্ব করবেন; জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটা ঠিক করবেন। তিনি আজকের বৈঠকে জাতীয় কংগ্রেসসহ ঢাকা মহানগরের সম্মেলন বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেবেন।

সূত্রমতে, আজকের বৈঠকে কংগ্রেসের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করা হতে পারে। আবার ওমর ফারুক চৌধুরীকে সরিয়ে প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাবও আসতে পারে। এ দুই সম্ভাবনার যে কোনো একটি কার্যকর হলে ওমর ফারুক চৌধুরী বাদ পড়বেন। অর্থাৎ তাকে বাদ দিয়েই যুবলীগের কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে।

যুবলীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, বুড়ো নেতাদের দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করার বিতর্ক এড়াতে এবার নেতৃত্বের বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার প্রস্তাবও আসতে পারে এ বৈঠকে। ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর সংগঠন প্রতিষ্ঠাকালে যুবলীগের গঠনতন্ত্রে নেতৃত্বের বয়সসীমা ৩৫ বছর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে গঠনতন্ত্র থেকে ওই বিধান বিলুপ্ত করা হয়। এর পর থেকেই বুড়োদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার প্রবণতা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে সংগঠনটির পরিচিতি দাঁড়িয়েছে ‘বুড়ো লীগ’ হিসেবে। সর্বশেষ ষষ্ঠ কংগ্রেসে বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ৬৪ বছর বয়সে দায়িত্ব পান। তার বয়স এখন ৭১ বছর। কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য নেতাদেরও বেশিরভাগের বয়স ষাটের ওপরে। এ নিয়ে নানা বিতর্ক চলে আসছে।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কোন বয়স পর্যন্ত যুবলীগ করা হবে, তা নিয়ে রোববার গণভবনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে আলোচনা হবে। বৈঠকে সংগঠনটির চেয়ারম্যানকে ডাকা হয়নি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কাকে ডাকবেন আর কাকে ডাকবেন না, সেটা প্রধানমন্ত্রীর বিষয়।

এর আগে গত ১১ অক্টোবর যুবলীগ চেয়ারম্যানকে ছাড়াই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক করেছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। সেখানে ওমর ফারুক চৌধুরীর ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিসকে বহিস্কার করা হয়। একই সঙ্গে প্রেসিডিয়ামের অনেক সদস্যই সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে পদবাণিজ্যসহ ক্যাসিনো, দরপত্র ও চাঁদাবাজির কমিশন পেয়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার অভিযোগ তুলে ধরেন। এ অবস্থায় কাউকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ করার দাবিও ওঠে ওই বৈঠকে।

কয়েকজন নেতা বলেছেন, চলমান ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার কিংবা আত্মগোপনে থাকায় যুবলীগের কর্মকাণ্ডে এমনিতেই অচলাবস্থা চলে আসছিল। অভিযান শুরুর কয়েক দিনের মাথায় ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব এবং বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর চার সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তিনি সংগঠনের কার্যালয়ে আসছেন না। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম ও কংগ্রেস আয়োজন নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওমর ফারুক চৌধুরীর নিজে থেকেই পদত্যাগ করা উচিত।

এদিকে, ‘যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হলে উপাচার্যের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে সম্মত আছেন’ বলে দেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। যুবলীগের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ এই প্রেসিডিয়াম সদস্যের এমন বক্তব্য সংগঠনকে নতুন করে বিতর্কের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলেও মনে করছেন সংগঠনের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই পদবাণিজ্য ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত ওমর ফারুক চৌধুরী সমালোচনার মুখে পড়েন। প্রভাবশালী এই যুবলীগ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করার পাশাপাশি তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়। এ অবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ যুবলীগের কংগ্রেসের তারিখ ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল সাত বছর আগে, ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর পর ২০১৫ সালে পরবর্তী সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। মূলত সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বের অনীহার কারণেই নির্ধারিত সময়ের পরও সম্মেলন করা যায়নি বলে অভিযোগ যুবলীগ নেতাদের।